সিন্ধু সভ্যতা কে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয় কেন?
সিন্ধু সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা নামেও পরিচিত কারণ প্রথম প্রাচীন সিন্ধু স্থানটি খনন করা হয়েছিল বর্তমান পাকিস্তানে অবস্থিত হরপ্পা শহর। হরপ্পা 1920-এর দশকে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং এটি সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সুপরিকল্পিত শহরগুলির মধ্যে একটি ছিল। হরপ্পার আবিষ্কার সিন্ধু সভ্যতা এবং এর সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত অর্জন বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সিন্ধু সভ্যতার মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় দাও
সিন্ধু সভ্যতার সামাজিক জীবনের পরিচয় দাও :-
সিন্ধু সভ্যতার যুগে মানুষ সমাজ বদ্ধ পরিবেশে বসবাস করত। সেখানে একক পরিবার পদ্ধতি চালু ছিল। সিন্ধু সভ্যতার যুগে সমাজে শ্রেণীবিভাগ ছিল। সব লোক সমান সুযোগ-সুবিধা পেতনা। সমাজ ধনী ও দরিদ্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। কৃষকরা গ্রামে বসবাস করত। শহরে ধনী এবং শমিকদের জন্য আলাদা-আলাদা বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া গেছে। পোষাক-পরিচ্ছদের জন্য তারা মূলত সুতা ও পশম ব্যবহার করত। সিন্ধুসভ্যতার সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। নারীরা খুবই শৌখিন ছিল। তাদের প্রিয় অলঙ্কারের মধ্যে ছিল হার, আংটি, দুল, বিছা, বাজুবন্ধ, চুড়ি, বালা, পায়ের মল ইত্যাদি। তারা নকশা করা দীর্ঘ পোষাক করত। পুরুষের অলঙ্কার ব্যবহার করত।
[1] সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস: সিন্ধু সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির অবস্থান ছিল।
কাশ্মীর মত: সিন্ধু সমাজে উচ্চবর্গীয় ও নিম্নবর্গীয় মানুষের স্পষ্ট বিভাজন লক্ষ্য করে ঐতিহাসিক দামোদর ধর্মানন্দ কোশাম্বী বলেছেন (a) প্রভাবশালী পুরোহিত ও শাসকগোষ্ঠী, (b) বেতনভুক যোদ্ধা সম্প্রদায়, (c) বণিক, কারিগর ও ভূস্বামীদের দল এবং (d) চাষি, দরিদ্র শ্রমিক, ভৃত্য ও দাস এই চার শ্রেণির মানুষ নিয়ে গড়ে উঠেছিল সিন্ধু সভ্যতার সমাজব্যবস্থা।
পুসকর মত: অধ্যাপক পুসকর সিন্ধুর জনসমাজকে চারভাগে ভাগ করেছেন। যথা (a) শিক্ষিত সম্প্রদায়, (b) যােদ্ধাশ্রেণি, (c) বণিক শ্রেণি, (d) করিগর ও শ্রমিক শ্রেণি।
[2] সামাজিক অবস্থান: সিন্ধুর সমাজ ব্যবস্থায় এক কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর অবস্থান ছিল। যাদেরকে সাহায্য করার জন্য গড়ে উঠেছিল আমলাতন্ত্র। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে শাসন এবং পুরোহিতের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চে। সমাজের এক শ্রেণি যুদ্ধবিগ্রহের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। পাশাপাশি বিত্তবানদের একাংশ ব্যবসা বাণিজ্য ও নানা ধরনের কারিগরি শিল্পের সাথে যুক্ত ছিল। সমাজের একবারে নীচু তলায় অবস্থান ছিল চর্মকার, চাষী, শ্রমিক, ভৃত্য ও দাসদের।
[3] সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃতি: সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত অসংখ্য নারীমূর্তি দেখে ঐতিহাসিকদের অনুমান এখানে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। কিন্তু অপর একদল ঐতিহাসিক মনে করেন যে সিন্ধুর সমাজ ব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক। এই মতের সমর্থকরা মনে করেন দূরপাল্লার বাণিজ্য, কৃষির প্রসার এবং ধাতব শিল্পের বিকাশের মধ্যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতিফলন মেলে।
[4] খাদ্যাভ্যাস: সিন্ধুবাসীরা গম ও যবের তৈরি খাবার খেত। ধানের চাষ অল্প বিস্তর চালু থাকায় ভাত আমাদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন পশুর মাংস, খেজুর, দুধ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। সিন্ধু উপত্যকায় প্রচুর পরিমাণে আঙুর ও আনারস উৎপাদিত হত। সিন্ধু অঞ্চলে তামার বড়শির নিদর্শন মেলায় মনে করা হয় মাছ ও কচ্ছপের মাংস তাদের খাদ্য ছিল।
[5] পোশাক-পরিচ্ছদ: সিন্ধু বাসীরা সুতি ও পশমের পোশাক পড়ত। তারা সাধারণত দুটি বস্ত্র খন্ড পোশাক হিসেবে ব্যবহার করত। একটি দেহের উর্ধাংশে অপরটি দেহের নিম্নাংশের ব্যবহার করা হত।
[6] অলংকার: সিল্ধুবাসী নারী, পুরুষ উভয়েই ধাতুর তৈরি অলংকার পড়ত। কানের দুল, চুড়ি, আংটি, মল, কোমরবন্ধ, মালা প্রভৃতি তারা অলংকার হিসেবে ব্যবহার করত। তারা চোখে সুরমা টানতে জানত। নারীরা বিভিন্ন ভাবে চুল বাঁধতে শিখেছিল। তারা চুলে হাতির দাঁতের তৈরি চিরুনি লাগিয়ে রাখত। পাখার মতো দেখতে এক ধরনের অলংকার তারা মাথায় ব্যবহার করত।
[7] সিল ও লিপি: সিন্ধু উপত্যকা জুড়ে তামা, ব্রোঞ্জ এবং পোড়ামাটির তৈরি প্রায় ২০০০ সিল আবিষ্কৃত হয়েছে। এই সিল গুলিতে এক ধরনের চিত্রলিপি খোদিত ছিল। এগুলির নাম হল সিন্ধু লিপি বা সিন্ধু লিপি।পন্ডিত ও গবেষকগণ এই লিপি গুলোর সঙ্গে সুমেরীয় ও মিশরীয় লিপির মিল খুঁজে পেয়েছেন। তারা অনুমান করেছেন এই লিপি ডানদিক থেকে বাম দিকে পড়া হত। কিন্তু এই লিপি গুলি এখনও পাঠোদ্ধার করা যায়নি।
[8] বিনোদন: সিন্ধু উপত্যকায় মার্বেল পাথরের তৈরি এক ধরনের বল ও পাশা আবিষ্কৃত হয়েছে। ঐতিহাসিকদের ধারণা এপুলি ছিল সিল্ধুবাসীর খেলার সরঞ্জাম। প্রাপ্ত বেশ কিছু সিলমােহরে শিকারের দৃশ্য রয়েছে। এই শিকারের দৃশ্যগুলি থেকে অনুমান করা হয় যে তাদের বিনোদনের আর-এক মাধ্যম ছিল শিকার করা। চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে নাচ, গান, ষাঁড় ও পাখির লড়াই আয়ােজিত হত।
সিন্ধু বাসীদের অর্থনৈতিক জীবন পরিচয় দাও:-
সিন্ধুসভ্যতার অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। তাছাড়াও অর্থনীতির আর একটি বড় দিক ছিল পশুপালন। কৃষি ও পশুলাপনের পাশাপাশি মৃৎপাত্র নির্মাণ, ধাতুশিল্প, বয়নশিল্প, অলঙ্কার নির্মাণ, পাথরের কাজ ইত্যাদিতেও তারা যতেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। এই উন্নতমানের শিল্পপন্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সেভানকার বণিকরা বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলত। বণিকদের সাথে আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান, মধ্য এশিয়া, পারস্য, মেসোপটেমিয়া, দক্ষিণ ভারত, রাজপুতনা, গুজরাট প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।
[1] পশুপালন: সিন্ধুবাসীদের অর্থনীতিতে পশুপালনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। সিন্ধুবাসীদের গৃহপালিত পশু ছিল গরু মহিষ, ভেড়া, ছাগল, শুকর ও উট। প্রয়োজনে তারা গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এ ছাড়াও তারা গরু ও মহিষকে চাষে লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করত।
[2] কৃষি
কৃষিকাজের সূত্রপাত : সিন্ধুর উভয় তীরে উর্বর সমভূমি তে প্রথমে গম আর যব চাষ শুরু হয়। পাশাপাশি সিল্ধুবাসী এসময় অল্পবিস্তর ধান চাষও শুরু করে।
কৃষিজাত ফসল : সিন্ধুবাসীদের প্রধান প্রধান কৃষিজাত ফসল ছিল গম, যব, তিল, মটর, রাই, বাদাম প্রভৃতি। অন্যান্য কৃষিজাত ফসলের মধ্যে ছিল বাজরা, ধান, নানা ধরনের কলাই এবং কার্পাস।
[3] শিল্প: সিন্ধু সভ্যতায় ধাতু শিল্প, মৃৎশিল্প, অলংকার শিল্প ও বস্ত্র বয়ন শিল্পের প্রচলন ছিল।
ধাতু শিল্প: সিন্ধু অঞ্চলে লােহার কোনো চিহ্ন না পাওয়া গেলেও তামা ও ব্রোঞ্জের বর্শা, কুঠার, বড়শি, করাত, ছুঁচ, দাঁড়িপাল্লা প্রভৃতি নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধাতু শিল্পের মধ্যে সোনা ও বুলুপান অলংকার নির্মাণশিল্পের প্রচলন ছিল।
মৃৎশিল্প: উজ্জয়িনী শহরের অদূরে (২৫ কিমি পূর্বে) কায়থা অঞ্চলে তিন ধরনের প্রাচীন মাটির পাত্র মিলেছে। এগুলি হল বেগুনি রঙের নকশা কাটা বাদামি পাত্র, হালকা লাল নকশা কাটা পীতাভ পাত্র এবং সুদৃশ্য আঁচড় কাটা লাল পাত্র। মৃৎশিল্পীরা পলিমাটি, বালি ও নুনের গুঁড়ো মিশিয়ে কলশি, জালা, থালা, পেয়ালা, ডেকচি, বয়াম প্রভৃতি নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও নানাপ্রকার খেলনা তৈরি করত।
বস্ত্র বয়ন শিল্প : সিন্ধু উপত্যকার বসতি এলাকা থেকে পোড়ামাটির ও বিভিন্ন ধরনের বস্তুর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি তকলি মিলছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে হাত দিয়ে সুতো কাটা হত বলে মনে করা হয়। মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত রঙিন কাপড়ের টুকরা এটি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের প্রাচীনতম সুতি কাপড়ের নিদর্শন। সিন্ধু সভ্যতায় যে পুরোহিত রাজার পাথরের মূর্তি পাওয়া গেছে, তার পােশাকে ছুঁচ দিয়ে করা যে অলংকরণ বা নকশা দেখা যায়, তা উন্নত সূচি শিল্পের পরিচায়ক।
[4] বাণিজ্য
বাণিজ্যের ধরন: সিন্ধু সভ্যতায় তিন ধরনের বাণিজ্যের প্রচলন ছিল। যথা-স্থানীয় বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ দূরপাল্লার বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
স্থানীয় বাণিজ্য: স্থানীয় বাণিজ্য চলত নিকটবর্তী একটি অঞ্চলের সঙ্গে অপর অঞ্চলের। পশুতে টানা গাড়ি, ভারবাহী বলদ ও জলযানের সাহায্যে পণ্যসামগ্রীর লেনদেন চলত।
অভ্যন্তরীণ দূরপাল্লার বাণিজ্য: মূলত সিন্ধু নদ ধরে দেশের মধ্যকার দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে বাণিজ্য চলত। বণিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে লোথাল, কালিবঙ্গান, ধোলাভিরা ছাড়াও সুদূর হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, মিশর, মেসোপটেমিয়া প্রভৃতি বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চলত।
আমদানি-রপ্তানি পণ্য: বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান থেকে সোনা, রুপা, সিসা, টিন ও দামি পাথর আমদানি করা হত। আর সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চল থেকে ওই সমস্ত দেশে রপ্তানি করা হত তুলে, সুতি বস্ত্র, তামা ও হাতির দাঁতের তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র। সিন্ধু সভ্যতার লোথাল বন্দরটি ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র।
সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক জীবনের পরিচয় দাও:-
সিন্ধুসভ্যতার জনগণের রাজনৈতিক জীবন ও শাসনপ্রণালি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। মহেঞ্জোদারো ও সিন্ধু নগর বিন্যাস প্রায় একই রকম ছিল। এগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উঁচু ভিতের উপর শহরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। শহরগুলোর এক পাশে উঁচু ভিত্তির উপর একটি করে নগর দুর্গ নির্মাণ করা হতো। চারদিক থাকত প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। নগরের শাসনকর্তারা নগর দুর্গে বসবাস করতেন। প্রশাসনিক বাড়িগরও দর্গের মধ্যে ছিল। নগরের ছিল প্রবেশদ্বার। দুর্গ বা বিরাট অট্টালিকা দেখে মনে হয় একই ধরনের কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে নগর দুটিতে প্রচলিত ছিল। এই প্রশাসন জনগণের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রন করত।
সিন্ধু সভ্যতায় মানুষ রাজনীতি সচেতন ছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের ফলে প্রাপ্ত ‘সিণ্ডুলিপি’র পাঠোদ্ধার না হওয়ায় এই সভ্যতার অধিবাসীদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন নিদর্শন থেকে এই সভ্যতার রাষ্ট্রনীতি ও প্রশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন দিকের অগ্রগতির আভাস পাওয়া যায়। যেমন—
রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা।
পৌর শাসনব্যবস্থা।
সিন্ধু বাসীদের ধর্মীয় অবস্থার জীবনের পরিচয় দাও :-
[1] ধর্মীয় বিশ্বাস: সিন্ধু বাসী বহুত্ববাদ অর্থাৎ বহু দেবতায় নাকি একেশ্বরবাদ বা এক দেবতার পূজায় বিশ্বাসী ছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই সভ্যতার প্রাপ্ত দেবদেবীর মূর্তিগুলি থেকে অনুমান করা হয় যে সময়ে মাতৃ মূর্তি পূজা করা হত। বিভিন্ন সিলে হাতি, বাঘ, মহিষ, ষাঁড়ের ছবি দেখে মনে করা হয় যে সেসময় পশুকেও পূজা করা হত। এ ছাড়াও সিন্ধুবাসীরা লিঙ্গ ও বৃক্ষ উপাসনায় বিশ্বাসী ছিল।
[2] টোটেম পূজা: সিন্ধু বাসীরা টোটেম অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাণী, প্রকৃতি ও জড় বস্তুকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করত।
লিঙ্গ ও যোনি মূর্তির উপাসনা: সিন্ধু বাসীরা লিঙ্গ ও যোনি মূর্তির উপাসনা করত। লিঙ্গ পূজার সঙ্গে পরবর্তীকালে দেবতা শিবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তুলে ধরা হয়।
বৃক্ষ উপাসনা: সিন্ধু বাসীরা বৃক্ষ পূজা করত। তারা মূলত অশ্বখ বৃক্ষ উপাসনা করত। সিন্ধুয় প্রাপ্ত এক সিলমোহরে পা-তোলা ভঙ্গিতে দণ্ডায়মান নারী উদর থেকে এক চারা গাছ বের হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। ঐতিহাসিকদের অনুমান একটি ছিল ভূ-মাতার মূর্তি।
পশুর উপাসনা: সিন্ধুবাসীরা বিভিন্ন পশুর পূজা করত। বিভিন্ন পশুর মধ্যে কুঁজ বিশিষ্ট ষাঁড়ের পূজার প্রচলন ছিল সব থেকে বেশি। কালিবঙ্গান প্রাপ্ত একটি সিলমোহরে ছাগলের প্রতিকৃতি দেখে মনে করা হয় আদি শিবের পূজায় ছাগ বলি দেওয়া হত।
[3] যোগী মূর্তির উপাসনা: সিন্ধুয় একটি সিলমোহরে পশু বেষ্টিত পদ্মাসনে উপবিষ্ট, তিন মুখ ও তিনটি শিং বিশিষ্ট একটি দেবমূর্তি পাওয়া গেছে। জন মার্শাল হিন্দু দেবতা পশুপতি শিবের সঙ্গে এই দেবতার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন। তবে ব্যাসাম একে সরাসরি শিব না বলে আদি শিব বলেছেন।
[4] মাতৃমূর্তি পূজা: সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্রগুলি থেকে অসংখ্য নারীমূর্তি আবিষ্কৃত হওয়ায় ঐতিহাসিকদের অনুমান সেসময়ে, এখানে মাতৃদেবীর পূজা খুব জনপ্রিয় ছিল। কোন কোন মূর্তির গায়ে ধোঁয়ার স্পষ্ট চিহ্ন দেখে মনে হয়, দেবীকে প্রসন্ন করতে অধিবাসীরা ধূপ ও প্রদীপ জ্বালাত।
[5] ধর্মীয় প্রতীকসমূহ: সিন্ধুবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে পদ্ম, স্বস্তিকা, চক্র, স্তম্ভ ও ত্রিশূল প্রভৃতি প্রতীক বা চিহ্ন জড়িত ছিল। মহেঞ্জোদারো ও সিন্ধু প্রাপ্ত বেশ কয়েকটি স্বস্তিক চিহ্নিত সিলে শিং বিশিষ্ট মাথার ছবি মিলেছে। এ ছাড়াও বেলুচিস্তানে কেজ উপত্যকায় স্বস্তিকা চিহ্ন বা চক্র চিহ্ন বিশিষ্ট কিছু মাটির পাত্র মিলেছে।
[6] পারলৌকিক বিশ্বাস
অতিপ্রাকৃত ধারণা: সিন্ধু উপত্যকার ধ্বংসাবশেষে মন্ত্রপূত কবচ মতো দেখতে এক ধরনের বস্তু মিলেছে। এগুলো দেখে মনে করা হয় যে, সিল্ধুবাসী অতিপ্রাকৃত অর্থাৎ অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করত। বজ্রপাত, ঝড়, বন্যা প্রভৃতি ঘটনাকে তারা অতিপ্রাকৃত শক্তির হ্রাসের কারণ বলে মনে করত।
অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া: সিন্ধুবাসী বিশ্বাস করত মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যায় না। এসময় তিন ধরনের পদ্ধতিতে মৃতদেহ সমাধির নমুনা মিলেছে-
প্রথম পদ্ধতি: মৃতদেহের সঙ্গে তার ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী সমাধিস্থ করা হত। একে বলা যায় সম্পূর্ণ সমাধি।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে কেবলমাত্র মৃতদেহটিকে সমাধিস্থ করা হত।
তৃতীয় পদ্ধতি: মৃতদেহ ভস্মীভূত করে সেই ভস্ম একটি আধারে ভরে, আধার কে সমাধিস্থ করা হত। মৃতদেহকে সাধারণত সমাধিস্থলের উত্তর থেকে দক্ষিণে শায়িত করার নিয়ম ছিল।
সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার আবিষ্কারকে কেন ভারতীয় ইতিহাসের একটি ল্যান্ডমার্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়?
সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার (Indus Valley Civilization) আবিষ্কারকে ভারতীয় ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ল্যান্ডমার্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম পরিচিত সভ্যতাগুলির মধ্যে একটিকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা প্রায় ৩৩০০-১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এটি প্রাচীন ভারতের উন্নত নগর পরিকল্পনা, স্থাপত্য এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংগঠনের মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। IVC-এর আবিষ্কার পূর্ববর্তী ধারণাটিকেও চ্যালেঞ্জ করে যে ভারতীয় সভ্যতা আর্য আক্রমণকারীদের আগমনের সাথে শুরু হয়েছিল, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সমাজের আদিবাসী শিকড়গুলিকে তুলে ধরে।
উপসংহার
আশা করি সিন্ধু সভ্যতার এই আর্টিকেল টি পড়ে যদি ভাল লাগে তবে আপনার বন্ধুদের এটি শেয়ার করবেন ।
Thank You ;)
Comments
Post a Comment
Please Leave a Comment ! Thank You.....