গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ pdf download - Bong Source

জানুন গীতার শ্লোক অর্থ সহ pdf download কিভাবে করবেন। গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা জানবেন আমদের এই ব্লগে। 

গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ, যা মহাভারতের ভীষ্ণু পুরাণের একটি অংশ। গীতা ১৮টি অধ্যায় এবং ৭০০টি শ্লোকের সমন্বয়ে গঠিত, যা প্রধানত শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের মধ্যকার সংলাপ। এই শ্লোকগুলির মধ্যে পৃথিবীজীবনের সকল প্রাসঙ্গিক দিক যেমন কর্ম, ভক্তি, জ্ঞান, দুঃখ, এবং মুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ গীতার শ্লোকের বাংলা অর্থ এবং তাদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করব।



গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ pdf download - Bong Source

শ্লোক ২.৪৭ (Chapter 2, Verse 47)

শ্লোক: "কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন | মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তোংগোং কর্মণি সমাচর।"

বাংলা অর্থ: "তুমি শুধু কর্মের প্রতি অধিকারী, কিন্তু তার ফলাফলের প্রতি কখনো অধিকারী নও। তাই কর্মফল সম্পর্কে চিন্তা না করে, নির্দ্বিধায় কর্ম কর।"

ব্যাখ্যা: এটি গীতার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক যেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কর্মের প্রতি নিবেদিত থাকার পরামর্শ দেন। আমরা জীবনে যে কাজই করি, তার ফলাফল আমাদের হাতে নেই। আমাদের উচিত শুধু সৎভাবে কর্ম করা এবং তার ফলাফল আল্লাহ বা ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেওয়া। যখন আমরা ফলাফলের প্রতি অতি মনোযোগী হই, তখন তা আমাদের মনে উদ্বেগ ও দুঃখ সৃষ্টি করতে পারে। গীতায় এটি শেখানো হয়েছে যে, সঠিক মনোভাব এবং নির্দ্বিধায় কাজ করা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয়।



শ্লোক ৩.১৬ (Chapter 3, Verse 16)

শ্লোক: "এবং যিনি এই পৃথিবীতে ব্রহ্মের আদেশ অনুসরণ করেন, এবং যথাযথভাবে কর্ম করে, তিনি কর্মের ফল লাভ করেন।"

বাংলা অর্থ: "যে ব্যক্তি সৃষ্টির আদেশ অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে, সে কর্মের ফল লাভ করে।"

ব্যাখ্যা: এটি শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ, যেখানে তিনি জানাচ্ছেন যে, সৃষ্টির আদেশ এবং প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি এই আধ্যাত্মিক আদেশ মেনে চলে এবং নিয়মিতভাবে সৎ কর্ম সম্পাদন করে, তার জীবনে সাফল্য আসে এবং সে আধ্যাত্মিক উচ্চতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।



শ্লোক ৪.৭ (Chapter 4, Verse 7)

শ্লোক: "যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত | অব্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানমৃজম্যহম।"

বাংলা অর্থ: "যতবার ধর্মের অবক্ষয় হবে এবং অধর্মের বৃদ্ধি হবে, ততবার আমি স্বীয় অবতারে পৃথিবীতে আসব।"

ব্যাখ্যা: এই শ্লোকের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ জানাচ্ছেন যে, পৃথিবীতে যখন ধর্মের অবক্ষয় বা অধর্মের বৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন তিনি অবতার গ্রহণ করেন এবং পৃথিবীতে এসে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। এই শ্লোকটি পৃথিবীতে ধর্ম রক্ষার জন্য ঈশ্বরের অবতার ধারণের তাৎপর্য বোঝায়।



শ্লোক ১৮.৬৬ (Chapter 18, Verse 66)

শ্লোক: "সরভধর্মান পরিত্যজ্জা মাম একম শরণং ব্রজ | অহং ত্বাম সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।"

বাংলা অর্থ: "তুমি সব ধরনের ধর্মের প্রতি ছেড়ে আমার কাছে একমাত্র শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি দেব এবং তুমি কোনো দুঃখ পাবে না।"

ব্যাখ্যা: এটি গীতার সর্বশেষ শ্লোক, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জানাচ্ছেন যে, সকল ধর্মের পরিত্যাগ করে, একমাত্র তাঁর শরণে আসা সর্বোত্তম উপায়। যখন আমরা ঈশ্বরের পূর্ণ শরণে যাই এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলি, তখন আমরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি লাভ করি। এই শ্লোকটি আত্মসমর্পণের গুরুত্ব এবং ঈশ্বরের করুণার প্রতি বিশ্বাস নির্দেশ করে।


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব পরিবর্তন করার একটি চিরন্তন শিক্ষা। এর প্রতিটি শ্লোক আমাদের মানবিকতা, আধ্যাত্মিকতার, এবং জীবনযাত্রার দিক থেকে মূল্যবান পাঠ দেয়। শ্রীকৃষ্ণের শিখানো এই মহান দিকনির্দেশনা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করলে, আমরা শান্তি, সুখ, এবং উন্নতির পথ খুঁজে পাব।


গীতার শ্লোক অর্থ সহ pdf download




গীতার সারাংশ বাংলায় অনুবাদ 

গীতার সারাংশ বাংলায় অনুবাদ নিচে এ দেওয়া হল -

গীতা সারাংশ :
যা হয়েছে তা ভালই হয়েছে,
যা হচ্ছে তা ভালই হচ্ছে,
যা হবে তাও ভালই হবে।
তোমার কি হারিয়েছে, যে তুমি কাঁদছ ?
তুমি কি নিয়ে এসেছিলে, যা তুমি হারিয়েছ?
তুমি কি সৃষ্টি করেছ, যা নষ্ট হয়ে গেছে?
তুমি যা নিয়েছ, এখান থেকেই নিয়েছ।
যা দিয়েছ এখানেই দিয়েছ।
তোমার আজ যা আছে,
কাল তা অন্যকারো ছিল,
পরশু সেটা অন্যকারো হয়ে যাবে।
পরিবর্তনই সংসার এর নিয়ম।।

গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ - ব্যাখ্যা 

গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ গীতার মাহাত্ম্য ও গীতার ব্যাখ্যা নিচে সবিস্তারে দেওয়া হল -


গীতাশাস্ত্রমিদং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ পুমান্।।১।।
গীতাধ্যায়নশীলস্য প্রাণায়মপরস্য চ। 
নৈব সন্তি হি পাপানি পূ্র্বজন্মকৃতানি চ।।২।।
মলিনে মোচনং পুংসাং জলস্নানং দিনে দিনে। 
সকৃদ্ গীতামৃতস্নানং সংসারমলনাশনম্।। 
গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ।
যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্ বিনিঃসৃতা।।৩।। 
 ভারতামৃতসর্বস্বং বিষ্ণুবক্ত্রাদ বিনিঃসৃতম্।
গীতাগঙ্গোদকং পীত্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।৪।। 
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ। 
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।৫।।
একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্।
একো দেবো দেবকীপুত্র এব। 
একো মন্ত্রস্য নামানি যানি 
কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা।।৭।। 




বাংলায় অনুবাদঃ ভগবদগীতার নির্দেশকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে, অতি সহজেই সমস্ত ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এই জীবনে ভয় ও শোকাদি বর্জিত হয়ে পরবর্তী জীবনে চিন্ময় স্বরূপ অর্জন করা যায়। “কেউ যদি আন্তরিকভাবে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভগবদগীতা পাঠ করে, তা হলে ভগবানের করুণায় তার অতীতের সমস্ত পাপকর্মের ফল তাকে প্রভাবিত করে না।”“প্রতিদিন জলে স্নান করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে, কিন্তু কেউ যদি ভগবদগীতার গঙ্গাজলে একটি বারও স্নান করে, তা হলে জড় জীবনের মলিনতা একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়।”যেহেতু ভগবদগীতার বাণী স্বয়ং পরম পুরুষোত্তম ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী, তাই এই গ্রন্থ পাঠ করলে আর অন্যকোন বৈদিক সাহিত্য পড়বার দরকার হয় না। গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে ভগবদগীতা শ্রবণ ও কীর্তন করলে আমাদের অন্তর্নিহিত ভগবদ্ভক্তির স্বাভাবিক বিকাশ হয়। বর্তমান জগতে মানুষেরা নানা রকম কাজে এতই ব্যস্ত থাকে যে, তাদের পক্ষে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পাঠ করা সম্ভব নয়। সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পড়বার প্রয়োজনও নেই। এই একটি গ্রন্থ ভগবদগীতা পাঠ করলেই মানুষ সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারমর্ম উপলব্ধি করতে  পারবে, কারণ ভগবদগীতা হচ্ছে বেদের সার এবং এই গীতা স্বয়ং ভগবানের মুখনিঃসৃত উপদেশ বাণী। “গঙ্গাজল পান করলে অবধারিতভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, আর যিনি ভগবদগীতার পুণ্য পীযুষ পান করেছেন, তাঁর কথা আর কি বলবার আছে? ভগবদগীতা হচ্ছে মহাভারতের অমৃতরস, যা আদি বিষ্ণু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলে গেছেন। (গীতা- ভগবানের চরণপদ্ম থেকে উদ্ভুত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগবানের মুখ ও পায়ের মধ্যে অবশ্য কোন পার্থক্য নেই। তবে আমাদের এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ভগবদগীতার গুরুত্ব গঙ্গার চেয়েও বেশি। “এই গীতোপনিষদ্ ভগবদগীতা সমস্ত উপনিষদের সারাতিসার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো এবং রাখাল বালকরূপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃ্ষই এই গাভীকে দোহন করেছেন। অর্জুন যেন গোবৎসের মতো এবং জ্ঞানীগুণী ও শুদ্ধ ভক্তেরাই ভগবদগীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান করে থাকেন।” বর্তমান জগতে মানুষ আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের, একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির। তাই, একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্- সারা পৃথীবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদগীতা।

শেষ কথা 

নীচে অবশ্যই জয় গীতা বলে কমেন্ট করে যাবেন..................।।


Tags: গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ pdf download,গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ,গীতার সারাংশ বাংলায় অনুবাদ


Next Post Previous Post
2 Comments
  • Unknown
    Unknown September 25, 2021 at 9:38 PM

    আরে মিথ্যাবাদি ১৪ নাম্বার কোথায়? আঠারোটি অধ্যায় আছে গীতায়, আঠারোটা নাম না। যা তা ইচ্ছামতো লিখলে হবে না। হরে কৃষ্ণ।

    • Shibu Das
      Shibu Das September 25, 2021 at 10:56 PM

      আপনার সঙ্গে তর্ক করা ও গীতা বিষয়ক মিথ্যা তথ্য প্রচার করা আমার কাম্য নয়। আমি আদ্দ-প্রান্ত দেখে শুনে তবে ইন্টারনেট এ শেয়ার করি। তবু আপনার কথার খাতিরে আর একটি ছোট তথ্য দিলাম....

      শ্রী শ্রীগীতা মাহাত্ম্যম্ অংশে দেখা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বপাপ নাশকারী গীতার নামাবলী প্রকাশ করেছেন,

      গঙ্গা গীতা চ সাবিত্রী সীতা সত্যা পতিব্রতা।

      ব্রাহ্মাবলির্ব্রহ্মবিদ্যা ত্রিসন্ধ্যা মুক্তিগেহিনী।।৪৯।।

      অর্ধমাত্রা চিতানন্দা ভবঘ্নী ভ্রান্তিনাশিনী।

      বেদত্রয়ী পরানিন্দা তত্ত্বার্থ জ্ঞানমঞ্জরী।। ৫০।।


      হরে কৃষ্ণ ...............

Add Comment
comment url