ভাতের ফ্যান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা | ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয়
জানুন ভাতের ফ্যান খেলে কি হয়,ভাতের ফ্যান খাওয়ার উপকারিতা,ভাতের ফ্যানের উপকারিতা,চুলের যত্নে ভাতের ফ্যান,ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয়,ভাতের ফ্যান খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা,ভাতের ফ্যানের ক্ষতিকর দিক,ভাতের ফ্যান খাওয়ার নিয়ম,ভাতের ফ্যান চুলে দিলে কি হয়,ভাতের ফ্যান ইংরেজি,গর্ভাবস্থায় ভাতের ফ্যান,ভাতের ফ্যানের ব্যবহার
আমাদের অজ্ঞতা অথবা অসতর্কতার কারণে রান্নার সময় খাদ্যের মূল্যবান পুষ্টি উপাদানের অপচয় হয়ে থাকে। অথচ একটু যত্নবান হলে আমরা খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদানের ফায়দা পুরোপুরি হাসিল করতে পারি। এখানে ভাতের ফ্যানের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা হলো।
ভাতের ফ্যানকে ফেন বলা হয়। ভাত রান্নার পর ফ্যান নিংড়িয়ে ফেলে দেয়া গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্য। কোন কোন এলাকায় ফ্যান গরীবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত। হতদরিদ্র লোকদের মধ্যে ফ্যান খাওয়ার অভ্যেস লক্ষ্য করা যায়। আকাল বা দুর্ভিক্ষের সময় মধ্যবিত্ত পরিবারেও এর কদর বেড়ে যায়। জঠর জ্বালা মেটাতে কিংবা পেট ভরার জন্য ফ্যান খাওয়ার প্রচলন আছে।
ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ফ্যান দেখলেই নাক ছিটকান। অথচ ফ্যান পুষ্টিগুণে গরীব নয় বরং ধনী। ভাতের ফ্যান হলো চালের নির্যাস।ভাত ঝরঝরে করতে ভাল ভাবে ভাতের ফ্যান ঝরিয়ে নেন সকলেই। ঝরঝরে ভাতের চেয়েও শরীর ঝরঝরে রাখতে সময় নিয়ে ফ্যান ঝরিয়ে নেন অনেকেই। কারণ, ভাতে ফ্যান বসে গেলে তা খাওয়ার পর যেমন পেট, শরীর ভার হয়ে যায়, তেমনই নিয়মিত ফ্যান বসা ভাত খেতে দ্রুত মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। তবে ভাতের ফ্যান ভাল করে ঝরিয়ে ফেলে না দিয়ে সেটিকে কাজে লাগাতে পারেন নানা উপায়ে।
প্রসঙ্গত, একাধিক প্রাচীন গ্রন্থেও এই বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানেও ভাতের ফ্যানকে কাজে লাগিয়ে শরীরকে কীভাবে রোগমুক্ত রাখা যায়, সে নিয়ে অনেক কিছু লেখা রয়েছে। এই লেখায়ও আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রাচীন শাস্ত্রকে মিলিয়ে ভাতের ফ্যানের এমন কিছু উপকারিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে, যা পড়তে পড়তে আপনি অবাক হবেনই।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ভাতের ফ্যানে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, ভিটামিন ই সহ আরও বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান আমাদের শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে আরও নানা কাজে লাগে। যেমন...
ভাতের ফ্যান খাওয়ার উপকারিতা
ভাতের ফ্যান খাওয়ার উপকারিতা নীচে আলোচনা করা হল ঃ-
চুলের জন্য উপকারী: এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ডি এবং ই যা চুলের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফেরাতে সাহায্য করে এবং চুলে বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চুলে ভাতের পানি ব্যবহার করে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
শক্তিবর্ধক: ভাতের পানিতে থাকা কার্বোহাইড্রেইট শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। শরীর খুব সহজেই এতে থাকা উপাদান শোষণ করে এবং তা শক্তিতে রূপান্তর করে। তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতে এক গ্লাস ভাতের পানি চমৎকার কাজ করে।
শরীরে আরাম অনুভব: গোসলের সময় পানিতে খানিকটা ভাতের পানি মিশিয়ে নিন। এতে শরীরের দুর্বলভাব দূর হয়ে আরাম অনুভূত হবে।
ফ্যানের ওষুধিগুণ : ভাতের ফ্যানের মধ্যে রয়েছে নানা বিস্ময়কর ওষুধিগুন। * যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাদের জন্য ভাতের ফ্যান হিতকর। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। * ভাতের ফ্যানে যথেষ্ট গ্লুকোজ থাকে। ফলে রক্তে পর্যাপ্ত শর্করা সরবরাহ করে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উপশমে ভাতের ফ্যান উপকারী। * ফ্যান কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস করে এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। * ফ্যান সহজপাচ্য। তাই গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য হিতকর। ফ্যান আলসারের ঝুঁকিও কমায়। * মানবদেহের মেলানিন ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ফ্যান বাধা দেয়। তাছাড়া সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি যাতে দেহে প্রবেশ করতে না পারে তাতেও ফ্যান বাদসাথে । * ভাতের ফ্যানে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে এন্ট্রি-অক্সিডেন্ট ও স্টেরয়েডি। খেলোয়াড়রা মাংসপেশীকে অধিক শক্তিশালী ও কর্মক্ষম রাখতে বাজার থেকে স্টেরয়েড বড়ি কিনে খান। এ বড়ি খেলে কারো কারো পার্শ্বপ্রক্রিয়া দেখা দিতে পারে এবং হিতেবিপরীত হতে পারে। অথচ ভাতের ফ্যানে প্রাকৃতিক স্টেরয়েড থাকায় মাংসপেশীকে অধিক শক্তিশালী ও কর্মক্ষম রাখে অথচ এতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই।
ব্রণের প্রকোপ কমায়
প্রতিদিন দুবার করে ভাতের ফ্যান ভাল করে মুখে লাগালে ব্রণ কমতে শুরু করে। কারণ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রণ কমে যায়।
ডায়ারিয়ার চিকিৎসায় কাজে লাগে
পানির মতো পায়খানা হয়েই চলেছে? সেই সঙ্গে পেটে এমন ব্যথা যে আত্মারাম খাঁচা হওয়ার যোগাড়! তাহলে এখন থেকেই ভাতের ফ্যান খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে পেট খারাপের সময় এক গ্লাস ভাতের ফ্যানে অল্প লবণ দিয়ে খেলে শরীরে উপকারী খনিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করে।
এনার্জির ঘাটতি দূর করে
শরীরচর্চার আগে এক গ্লাস ভাতের ফ্যান খেলে শরীরে ৮টি উপকারী অ্যামাইনো এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা এক্সারসাইজের সময় পেশির গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ভাতের ফ্যানে উপস্থিত কার্বোহাড্রেট এনার্জির ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
চুল গোড়া থেকে মজবুত করতেঃ
ভাতের ফ্যানে জল মিশিয়ে খানিকটা পাতলা করে নিন। শ্যাম্পু করার পর চুলে ভাতের ফ্যান দিয়ে মিনিট তিনেক রেখে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। চুলের ডগা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যার মোকাবিলায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এ ছাড়া চুল গোড়া থেকে মজবুত করতে আর চকচকে করতে সাহায্য করে এই পদ্ধতি।
ভাতের ফ্যান খাওয়ার অপকারিতা
ভাতের ফ্যান খাওয়ার অপকারিতা বলতে তেমন কিছু নেই শুধু এটা বলতে পারি যে ভাতের ফ্যান বেশি পরিমানে খেলে সুগার ও মোটা হওয়ার প্রবনতা হয়।
ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয়
ভাতের ফ্যান খেলে কি মোটা হয় এই প্রশ্নের উত্তর হল প্রায় অনেকটা । ওবেসিটির মানে মোটা হওয়ার কড়া চোখের কারণে খাবারের পাত পাল্টে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। ভাত না খেয়ে ওজন কমানোর চিন্তায় বেছে নিচ্ছি পেট ভরানোর অন্য নানা বিকল্প৷ যে ভাত আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির মূল স্তম্ভ, তাকে বর্জন করে সুস্থ থাকার চেষ্টায় ইন্ধন জোগাচ্ছে ‘লো ফ্যাট নো কার্বস’ ডায়েট।
কিন্তু ভাত মানেই হু হু করে ওজন বাড়বে এমন নয় বলেই দাবি পুষ্টিবিদদের৷ তাঁরা জানিয়েছেন, সকাল–বিকেল এক থালা ভাত নিয়ে বসা যেমন কাজের কথা নয়, ঠিক তেমনই তাকে পুরোপুরি বর্জন করারও দরকার নেই কোনও৷ কারণ সারা দিন ধরে তরতাজা থাকতে হলে, সুস্থ শরীরে কাজকর্ম করে যেতে হলে সকাল বা দুপুরের দু’–মুঠো ভাতের কোনও বিকল্প হয় না৷ ফ্যান না ঝড়ানো ভাত হলে আরও ভাল৷ কারণ তাতে ভিটামিন বেশি পাওয়া যায়৷